জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের সাত মাসেও সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের কোন অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত ফাইল চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এর কর্মকাণ্ড। এতে প্রকল্পটির কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের সভায় সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৩৯টি উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও আবাসস্থল, রোগ-বালাই ও সংরক্ষিত এলাকার বৈশিষ্ট্য ও প্রতিবেশ নিয়ে জরিপ করা হবে। সুন্দরবনের নদী, খাল, পুকুর ইত্যাদি খনন-পুনঃখননের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, বনের সম্পদ আহরণকারী ও সুবিধাভোগীদের জন্য প্রচলিত পারমিট সিস্টেম ও পরিচয়পত্র অটোমেশন করা হবে, যার পরিমাণ হবে ৩০ হাজার এবং ইকোট্যুরিজম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ট্যুর গাইডদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় অফিস ও আবাসিক ভবন, দ্রুতগামী জলযান ক্রয়, ব্যারাক, কাঠের জেটি, পন্টুনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচী রয়েছে। এছাড়াও বিশাল এ বনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বনকর্মীদের প্রশিক্ষণ, খুলনাভিত্তিক জিআইএস ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার সফটওয়্যার ও সফটওয়্যার লাইসেন্স এবং জিপিএস ট্রাকিং সুবিধার উন্নয়ন করা হবে। রিমোট সেন্সিং এবং জিআইএস প্রয়োগের মাধ্যমে স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের তথ্যভান্ডার তৈরি ও এর পরিধি বাড়ানো হবে।
আরও পড়ুন: সাত মাসেও আলোর মুখ দেখেনি ‘সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প’
তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম কাজ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজগুলো এখনো শুরু করা যায়নি বলে ডিএফও আবু নাসের জানিয়েছেন।
বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে নাম পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরেই প্রকল্পটির কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের এ ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা।
সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবনকে নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অতীতেও এরকম দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেছে। শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কাজ করতে যেয়ে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হয় না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় অঞ্চলকে সুন্দরবন যেভাবে নিরাপদ রাখে, সে বনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সবসময়ই উদাসীনতা দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: বাঘ সংরক্ষণে সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে: পরিবেশ উপমন্ত্রী
সুন্দরবনে হরিণের মাংস ও মাথাসহ শিকারি আটক
এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।’
খুব শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।